ﺍﻟﺤﻤﺪﻟﻠﻪ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ ﻭﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻰ ﺳﻴﺪﻧﺎ
ﻣﺤﻤﺪ ﺭﺳﻮﻟﻪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ
মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের সূরা
দুখানের শুরুতে ঘোষণা করেনঃ
"শপথ প্রকাশ্য কিতাবের! নিশ্চয়ই আমি
বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল
করেছি। আমিই সতর্ককারী। আমারই
নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি
প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয়। আর
নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।" (সূরা দুখানঃ
২-৫)
পূর্বের পর্বে আলোচনা হয়েছে স্বনামধন্য
মুফাসসিরীনে কেরামগণ "লাইলাতাম
মুবারাকা" বলতে শাবানের মধ্য রাত্রি
অর্থাৎ শবে বারাত বা লাইলাতুল বারাতকে
চিহ্নিত করেছেন। পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ শুরু
হয়েছে পবিত্র মহিমান্বিত ক্বদরের রজনীতে
এই নিয়ে পরিষ্কার আয়াত রয়েছে সূরা
ক্বদরে এবং কুরআনের আরও কিছু স্থানে। এই
নিয়ে কারো কোন সংশয় নেই। কিন্তু সূরা
দুখানের "লাইলাতাম মুবারাকা" বলতে
ক্বদরের রাতকে বুঝানো হয়নি বলে মত
দিয়েছেন বিখ্যাত অনেক মুফাসসিরীনে
কেরাম। কারণ আল্লাহ পাক এমন এক বরকতময়
রজনীতে কোরআন নাজিলের উদ্যোগ
নিয়েছেন যে রজনীতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময়
বিষয়ের ফায়সালা করা হয়। সহীহ হাদিসের
আলোকে সেই রজনী শাবানের মধ্য রজনী, যে
রজনীতে প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা করা
হয়। এ কারণে রমজান মাস ব্যতীত একমাত্র
শাবান মাসই রাসুল ﷺ এর কাছে
অত্যধিক প্রিয় মাস ছিল। রমজান ব্যতীত এ
মাসেই তিনি অধিক রোযা পালন করতেন আর
নফল আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। এ
মাসে আমরা যেন আমাদের আমল ও বাড়িয়ে
দেই সে ব্যাপারে তিনি পরামর্শও
দিয়েছেন।
সহীহ বুখারি এবং সহীহ মুসলিমের বেশ কিছু
হাদিসে বিভিন্ন বর্ণনাকারীর মাধ্যমে
একথা আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন রাবির
শব্দে কিছু তারতম্য রয়েছে কিন্তু বিষয়বস্তু
একই।
"আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ ﷺ শাবান মাস
ব্যাতীত বছরের অন্য কোন মাসে এত অধিক
সাওম (রোযা) পালন করতেন না। তিনি
বলতেনঃ তোমরা যথাসাধ্য অধিক পরিমাণে
ভাল কাজ কর। কারণ আল্লাহ তা'আলা সওয়াব
দিতে কখনও ক্লান্ত হন না বরং তোমরাই
আমল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়। তিনি
আরও বলতেনঃ বান্দা যে কাজ
নিরবিচ্ছিন্নভাবে করতে পারে, তাই
আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়- তার পরিমাণ
কম হলেও।" (সহীহ বুখারিঃ ১৮৪৬ ই ফা, সহীহ
মুসলিমঃ ২৫৯৮)
আহলে হাদিস, জামাত বা তাদের
অনুসাররীগণ প্রশ্ন তুলবেন এখানে তো শাবান
মাসের কথা বলা হয়েছে, বিশেষ কোন
দিনের বা রাতের কথা বলা হয়নি। অপেক্ষা
করুণ। তাদের প্রশ্নের জবাব আসছে নিচের
হাদিসে। শাবানের মধ্য দিনের রোজার গুরুত্ব
সম্পর্কে রাসুল ﷺ বলেন, কেউ
যদি এ দিনের রোজা না রেখে থাকে সে
যেন রমজানের পরে একটির বিনিময়ে দুইটি
রোজা রাখে। দেখুন হাদিসটিঃ
"ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে,
রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে
জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি শাবান মাসের
মধ্যভাগে সাওম (রোযা) পালন করেছিলে?
তিনি বললেন, না। তখন রাসুলুল্লাহ
ﷺ বললেনঃ যখন-তুমি সাওম
(রোযা) পালন করনি, তখন দুই দিন সাওম পালন
করে নিও।" (সহীহ বুখারিঃ ১৯৮৩/ ১৮৫৭- ই ফা,
সহীহ মুসলিমঃ ২৬২২)
এব্যাপারে আরও কিছু হাদিস রয়েছে
উপরোক্ত হাদিসের আগে ও পরে। যাদের
কাছে উক্ত কিতাবগুলো রয়েছে তারা পড়ে
নিতে পারেন। এ পর্যায়ে এসে শবে
বারাতকে বিদাত আখ্যাকারীগণ বলবেন,
এটা তো রোজা রাখার ব্যাপারে। কোন
রাতকে মর্যাদা দেবার ব্যাপারে নয়। তাদের
জন্য নিচের হাদিস দু'টি গুরুত্বপূর্ণ।
"উসামা বিন যায়দ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর
রাসূল, আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমান
রোযা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা
দেখি না। এর কারণ কী? তিনি বললেন: রজব
এবং রামাযানে মধ্যবর্তী এ মাসটি সম্পর্কে
মানুষ উদাসিন থাকে। অথচ এটি এত গুরুত্বপূর্ণ
মাস যে, এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের
দরবারে মানুষের আমল সমূহ উঠিয়ে নিয়ে
যাওয়া হয়। আমি চাই রোযা অবস্থায় আমার
আমল উঠানো হোক।মুসনাদ আহমাদ ৫ম খন্ড ২০১ পৃষ্ঠা। সুনান
নাসাঈ, কিতাবুস সিয়াম। আলবানী সাহেব এ
সনদটিকে হাসান বলে মত দিয়েছেন। দ্র:
সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহাহ্। হাদীস
নং ১৮৯৮)
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম)
শাবান মাসে রোজা রাখতেন। আমি আরজ
করলামঃ হে আল্লাহর রাসুল! সকল মাসের
মধ্যে কি আপনার নিকট শাবানে রোজা
রাখা অধিক পছন্দনীয়? তখন তিনি ইরশাদ
করেনঃ আল্লাহ তা'লা এ বৎসরে
মৃত্যুবরণকারী প্রতিটি আত্মার নাম এ মাসে
লিখে দেন। আর আমি এটা পছন্দ করি যে,
আমার বিদায়ের সময় (যখন) আসবে তখন যেন
আমি রোজা অবস্থায় থাকি।
(মুসনাদে আবি ইয়ালা, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস নং
৪৮৯০, দারুল কুতুব বৈরুত)
উপরোক্ত হাদিসগুলো দ্বারা প্রমাণ হয় যে
শাবান মাসে আমাদের আমল আল্লাহর কাছে
পৌঁছে আর কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী অনেক
প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয়। কাজেই
যে রাতে প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয়ে
থাকে সে রাত্রি ক্বদরের রজনী নয়। বরং সে
রাত্রিটি হল শাবানের কোন এক রাত্রি। আর
শাবানের মধ্যরাত্রি নিয়ে অন্যান্য হাদিস
গ্রন্থের হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে
দেখা যায় যে সে রাত্রিটি হল শাবানার মধ্য
রাত্রি বা শবে বারাত। যা ১৪ শাবানের
দিবাগত রাত।
আর শাবানের শেষ অংশে রোজা রাখার
ব্যাপারে রাসুল ﷺ নিরুৎসাহিত
করেছেন। আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বণির্ত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন: 'শাবান মাস অধের্ক হয় গেলে
তোমরা রোযা রেখো না (মুসনাদ আহমাদ
(২/৪৪২)
আর নিচের হাদিসটি আহলে হাদিস, জামাত-
শিবির, ওহাবী নজদি সবার মুখে ছাই
নিক্ষেপ করে দিয়েছে যারা বলে শবে
বারাত বলে কুরআন ও হাদিসে কিছু নেই, শবে
বারাত বিদাত।
)) ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻴﻄﻠﻊ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ، ﻓﻴﻐﻔﺮ
ﻟﺠﻤﻴﻊ ﺧﻠﻘﻪ ، ﺇﻻ ﻟﻤﺸﺮﻙ ﺃﻭ ﻣﺸﺎﺣﻦ((
" হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত।
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা
অর্ধ শাবানের রাতে (পৃথিবীর) দিকে
তাকিয়ে দেখে মুশরিক এবং বিদ্বেষ
পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সমস্ত সৃষ্টিকে
ক্ষমা করে দেন।" (সহীহ ইবনে হিব্বান,
হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস
নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই,
হাদীস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস
নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫,
সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০,
মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩, মুসন্নাফে
ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল
ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪)
আহলে হাদিসের ভাইয়েরা আপনাদের ইমাম
আলবানি সাহেব এই হাদিসটিকে সহীহ বলে
মত দিয়েছেন। কাজেই এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ
করলে আপনারা নিজের বিরুদ্ধেই যুদ্ধে
নিয়োজিত হবেন।
পরবর্তী পর্বে আসছে হাদিসের আলোকে
শবে বারাতের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। পোস্টটি ভাল
লেগে থাকলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার
করুণ আর মানুন আর নাই মানুন কবরে এক দিন জেতে হবে সেই দিনই বুজবেন হক কি????
:-c Share & Like :-bd
শাবানে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয় ও শবে বারাত এর গুরুত কি?? http://yanabi.in/u/10
Comments