★بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم★لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ★اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ★
YaNabi.in
হজ্জে বায়তুল্লাহ, হজ্জ ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদী ইবাদত সম্বন্ধে বিস্তারিত জানুন - Ibadat amal Discussions on

হজ্জে বায়তুল্লাহ, হজ্জ ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদী ইবাদত সম্বন্ধে বিস্তারিত জানুন

edited August 2017 in Ibadat amal

হজ্জে বায়তুল্লাহ


হজ্জ ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদী ইবাদত। আল্লাহ-প্রেমের পরম নিদর্শন এবং এক ব্যতিক্রমর্ধমী ইবাদত এ হজ্জ। ইসলামের সকল ইবাদত নামায, রোয, যাকাত, জিহাদ, সদক্বাহ-খয়রাত, যিকর-আযকার এবং তরীক্বতের সবক্ব পালন ইত্যাদি সর্বত্র আদায়যোগ্য। কিন্তু হজ্জ ব্যতিক্রম। এটা একমাত্র নির্দিষ্ট মওসুমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মেহমানরূপে মর্যাদাবান হয়ে খানায়ে কা’বা বায়তুল্লাহ শরীফ উপস্থিত হয়েই শ্তধু আদায় করা যায়।
কোন কোন ইবাদত দৈহিক; যেমন নামায, রোযা, যিকর- আযকার’ আর কোন কোন ইবাদত মালী বা আর্থিক; যেমন যাকাত-ফিতরা, সাদক্বাহ-খায়রাত ইত্যাদি। কিন্তু হজ্জ এমন একটি ইবাদত যা শারীরিক শ্রম-সাধনা এবং আর্থিক ক্বোরবানী উভয়ের সমন্বয়ে আদায় করতে হয়। অন্যান্য সকল ইবাদত রিয়াযতে আনুগত্যের প্রাধান্যই পরিদৃষ্ট হয় আর হজ্জে বায়তুল্লাহর বিধি-বিধান পালনকালে আল্লাহর প্রেমের প্রধান্যই পরিলক্ষিত হয়। তাই হজ্জে মাক্ববূলের প্রতিদান হলো জান্নাত।
হজ্জ এমন একটি আমল যার বদৌলতে আন্তর্জাতিক ইসলামী ভ্রাতৃত্ব বন্ধুত্ব এবং সংহতিও সূচিত হয় বিশ্ব মুসলিমের মধ্যে। কেননা, প্রতি বছর নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষ-লক্ষ মু’মিন নর-নারী আরাফাত, মিনা-মুয্দালিফায় সমবেত হয়ে এক আল্লাহর মহত্ব-বড়ত্ব ও গুণগানে মত্ত হয়ে উঠে। ভাষা, বর্ণ, বাসভূমি ইত্যাদি কারণে বিক্ষিপ্ত ‍মুসলিম মিল্লাত হজ্জের বরকতে ও বদৌলতে আরাফাতের ময়দানে একক মুসলিম জাতি সত্তায় পরিণত হয়। এভাবেই বিশ্ব মুসলিম ঐক্যের ভিত সুদৃঢ় ও সুসংহত হয়। হজ্জ এমন একটি গুরুত্ববহ রিয়াযত যার বরকতে মানব হৃদয়ে বিনয় নম্রতা ও কোমলতা আর চরিত্রে পবিত্রতা পরিশুদ্ধি অর্জিত হয়। যা হজ্জে মাকবূলেরই নমুনা ও নিদর্শন। এহেন অপরিসীম পার্থিব ও পারলৌকিক কল্যাণ, মঙ্গল ও উপকার নিহিত রয়েছে পবিত্র হজ্জে বায়তুল্লাহর মধ্যে। এজন্য ক্বোরআনে কারীমের অনেক আয়াতে এবং হাদীসে নবভী শরীফের অনেক রেওয়ায়ত বারংবার তাগিদ দেয়া হয়েছে সামর্থ্যবান মু’মিন নর-নারীর প্রতি হজ্জ সম্পন্ন করার বিষয়ে। -সুত্রঃ গাউসিয়া তারবিয়াতী নেসাব-




হজ্বের সংজ্ঞা


পবিত্র ক্বোরআনে কারীম এবং হাদীসে নবভী শরীফে হজ্জ শব্দটি ‘হা’ তে যবর ও যের সহকারে অর্থাৎ حَج এবং حِج উভয়রূপে উল্লিখিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেন হজ্জ শব্দটি যবর যোগে ‘মাসদার’ (ক্রিয়ামূল) আর যের সহকারে ‘ইসম’ বা বিশেষ্য। আবার কোন কোন মুহাক্বক্বিক্ব বলেন, যবর সহকারে হজ্জ শব্দটি ‘ইসম’ বা বিশেষ্য এবং যের সহকারে হজ্ব শব্দটি ‘মাসদার’ বা ক্রিয়ামূল। হজ্জ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো قَصْدُ الشَّىْءِ الْعَظِيْمِ الْفَخِيْمِ অর্থাৎ আযীমুশ্বান কোন বিষয় বা বস্তু অর্জনের সংকল্প করা, ইচ্ছা করা। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হজ্বের মাসসমূহে ইহরাম পরিধান করে ৯ জিলহজ্জ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা এবং বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করার সংকল্প করাকে হজ্জ বলা হয়। -সুত্রঃ গাউসিয়া তারবিয়াতী নেসাব-

Tagged:

Comments

  • edited August 2017
    হজের বিশেষ স্থান ও পরিভাষা পরিচিতি ইহরাম : ইহরাম অর্থ কোনো বিষয়কে হারাম বা নিষিদ্ধ করা। বিশ্ব-সংসারের সব বন্ধন মুক্ত হয়ে, সব অন্যায় থেকে বিরত হয়ে এক আল্লাহর ধ্যান ছাড়া সব কিছু বিসর্জন দেওয়ার সংকল্প করা হলো ইহরাম। সাধারণ পরিধেয় পোশাকের পরিবর্তে সাদা সেলাইবিহীন দুটি থানকাপড়ের একটি পরা ও অন্যটি কাঁধের ওপর ফেলে শরীরের ঊর্ধ্বাংশ ঢেকে নেওয়াকে ইহরাম বলা হয়। ইহরাম পরেই দুই রাকাত নামাজ আদায় করে হজের সংকল্প অর্থাৎ নিয়ত করতে হয়। হারাম শরিফ : পবিত্র কাবা ঘরের চারপাশের বিশাল মসজিদকে বলা হয় হারাম বা হেরেম শরিফ। তালবিয়াহ : তালবিয়াহ হলো বিশেষ কিছু আরবি শব্দের সমাহার। যেমন_’লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক।’ এই শব্দসমষ্টিকে সব সময় একনিষ্ঠ হয়ে পাঠ করতে হয়। এই শব্দসমষ্টি পাঠ করাকেই তালবিয়াহ পাঠ বলে। ইহরাম শুরু করেই তালবিয়াহ পাঠ শুরু করতে হয়। তালবিয়াহ দ্বারা একদিকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করা এবং অন্যদিকে এই উপস্থিতির দ্বারা বিশ্বপ্রভুর অনুগ্রহ ভিক্ষার প্রার্থনা করা হয়। তালবিয়াহ পুরুষরা উচ্চ আওয়াজে এবং মহিলারা নিম্ন আওয়াজে পড়বে। তাওয়াফ : পবিত্র কোরআনে বায়তুল্লাহকে তাওয়াফ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাওয়াফ অর্থ প্রদক্ষিণ করা। কাবা ঘরের হাজরুল আসওয়াদের কোণ থেকে সর্বদা বাঁ হাত কাবাঘরের দিকে রেখে এই তাওয়াফ করতে হয়। যেখান থেকে শুরু সেখান পর্যন্ত এলে এক চক্কর হয়। আরবিতে প্রতি চক্করকে ‘সাওত’ বলে। একটি তাওয়াফ সম্পন্ন হয় সাত চক্কর বা সাওত প্রদক্ষিণ করলে। তাওয়াফ শেষে দুই রাকাত সালাত আদায় করতে হয়। তাওয়াফে কুদুম : মক্কা শরিফ পৌঁছেই যে তাওয়াফ করা হয়, তাকে তাওয়াফে কুদুম বলে। তাওয়াফে জিয়ারত : ১০ জিলহজ মিনায় কোরবানি দিয়ে বা ১১ অথবা ১২ তারিখে মিনা থেকে মক্কা শরিফে এসে যে তাওয়াফ করতে হয়, তাকে তাওয়াফে জিয়ারত বলে। এটি হজের ফরজ রোকন। একে তাওয়াফাল হজ বা হজের তাওয়াফও বলা হয়। তাওয়াফে বিদা : হজের সব কাজ শেষ করে দেশে ফেরার বা মক্কা শরিফ ত্যাগ করার আগে যে তাওয়াফ করতে হয়, তাকে তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ী তওয়াফ বলে। সায়ি : সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সাতবার দ্রুতপদে অতিক্রম করাকে সায়ি বলে। সায়ি অর্থ হাঁটা ও দৌড়ানোর মাঝামাঝি অবস্থায় দ্রুতপদে হেঁটে চলা। সাফা পাহাড় থেকে সায়ি শুরু করতে হয়। সাফা থেকে শুরু করে মারওয়া পৌঁছলে একবার সায়ি গণ্য হবে আবার মারওয়া থেকে সাফায় এলে আরেকবার গণ্য হবে। এভাবে মারওয়ায় গিয়ে সপ্তম সায়ি পূর্ণ হবে। যাঁরা নিজেরা দ্রুতপদে যেতে পারবেন না বা হাঁটতে পারবেন না, তাঁদের জন্য ওখানেই হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা আছে। এতে বসে সায়ি করতে পারবেন। এর জন্য টাকা দিয়ে হুইল চেয়ার ভাড়া করতে হবে। রমল : রমল শব্দের অর্থ হলো হাঁটা ও দৌড়ানের মাঝামাঝি অবস্থায় বীরদর্পে চলা। যেসব তাওয়াফের পর সায়ি করতে হয়, সেসব তাওয়াফের প্রথম চক্করে বীর বিক্রমে কাঁধ হেলিয়ে সজোরে ঘন ঘন পা ফেলে দ্রুতপদে চলাকে ‘রমল’ বলে। মাকামে ইব্রাহীম : কাবাঘরের পূর্ব দিকে হজরত ইব্রাহীম عليه السلام-এর পদচিহ্ন সংবলিত একটি পাথর কাচের বেড়ির মধ্যে রাখা আছে। এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইব্রাহীম عليه السلام কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন। এই রক্ষিত পাথরের আশপাশই মাকামে ইব্রাহীম নামে পরিচিত। হাতিম : কাবা শরিফসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম দিকে অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালঘেরা জায়গাকে ‘হাতিম’ বলে। এটি দোয়া কবুলের অন্যতম একটি স্থান। মিজাবে রহমত : মিজাব আরবি শব্দ। মিজাব অর্থ হলো নল। হাতিমের মধ্যে একটি পাথরের ওপর পবিত্র কাবাঘরের ছাদের পানি পড়ার জন্য যে স্বর্ণের নল আছে, সেই নলটিকেই মিজাবে রহমত বলে। কখনো বৃষ্টি হলে এই বরকতময় পানি সংগ্রহের জন্য ভিড় জমে যায়। মুলতাজিম : পবিত্র কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একখণ্ড বেহেশতি পাথর লাগানো আছে। এখান থেকে কাবাঘরের দরজা পর্যন্ত দেয়ালের অংশটিকে মুলতাজিম বলে। এটি দোয়া কবুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বাবুস সালাম : মসজিদুল হারামের পূর্ব দিকের যে দরজা দিয়ে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ ﷺ বেশির ভাগ সময়ই কাবা শরিফে প্রবেশ করতেন, তাকেই বাবুস সালাম বলা হয়। বাবুল বিদা : এটি মসজিদুল হারামের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের দরজা। বহিরাগত হাজিরা সাধারণত কাবাঘরকে সামনে রেখে এই দরজা দিয়ে বের হয়ে আসেন। রোকনে ইয়েমেনি : রোকন শব্দের অর্থ হলো ‘কোণ’। ইয়েমেন দেশের দিকের কোণকে রোকনে ইয়েমেনি বলে। কাবা শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণটি হলো রোকনে ইয়েমেনি। অনুরূপভাবে বায়তুল্লাহ শরিফ থেকে ইরাক ও সিরিয়ার দিকের কোণকে যথাক্রমে রোকনে ইরাকি ও রোকনে শামি বলা হয়। বাবুস সাফা : তাওয়াফ শেষ করে এই দরজা দিয়ে সায়ি করার জন্য সাফা পাহাড়ের দিকে যাওয়া হয়। জমজম : আল্লাহর নির্দেশে অলৌকিকভাবে প্রবাহিত হওয়া একটি প্রাচীন ঝরনার নাম জমজম। এটি হজরত হাজেরা ও হজরত ইসমাইল عليه السلام-এর জীবনের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই পানি দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে পান করতে হয়। পানি পান করার সময় পড়তে হয়_’আল্লাহুম্মা ইনি্ন আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান রিজকান ওয়াসিয়ান ওয়া শিফাউন মিন কুলি্ল দায়িন।’ মিনা : মিনা বা মুনা আরবি শব্দ। মিনা অর্থ প্রবাহিত। এটি মক্কা শরিফ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পাঁচ মাইল দূরের একটি প্রান্তর। এখানে সব হাজিকেই ৮ জিলহজ পৌঁছতে হয়। এখান থেকে ৯ জিলহজ আরাফাতের উদ্দেশে রওনা হতে হয়। ৯ জিলহজ দিবাগত রাত ছাড়া ১৩ তারিখ পর্যন্ত হাজিদের এখানেই থাকতে হয়। শয়তানকে পাথর মারার জায়গাও এটি। আরাফাত : মক্কা শরিফ থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ১৪ মাইল বা ২২ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দূরে পর্বতবেষ্টিত এক বালুকাময় প্রান্তরের নাম আরাফাত। এখানেই ৯ জিলহজ জোহর নামাজের পর অবস্থান করার মাধ্যমেই হজের প্রথম ও প্রধান কাজ সম্পন্ন করা হয়। আরাফা আরবি শব্দ। আরাফা শব্দের অর্থ চিনতে পারা। বেহেশত থেকে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর হজরত আদম ও হাওয়া عليه السلام এখানেই পরস্পরকে চিনতে পেরেছিলেন। আরাফাতে অবস্থানকালে নামাজ, প্রার্থনা ও তালবিয়াহ পড়ার মধ্যে তন্ময় হয়ে থাকতে হয়। জাবালে রহমত : এটি আরাফাতের মাঠের একটি পাহাড়। হজের সময় এরই সনি্নকটে অবস্থান করতে হয়। এই পাহাড়ের পাদদেশ থেকেই হজরত মুহাম্মদ ﷺ বিদায় হজের ঐতিহাসিক মনোমুঙ্কর ভাষণ প্রদান করেছিলেন। আর দায়িত্ব পালনে পূর্ণতা অর্জনের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। ওকুফে আরাফা : ওকুফ অর্থ অবস্থান। আর ওকুফে আরাফা অর্থ আরাফার মাঠে অবস্থান করা। ৯ জিলহজ জোহর নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার মাঠে অবস্থান করাকে ওকুফে আরাফা বলে। এই এলাকার মধ্যে অবস্থান না করলে হজ হবে না। এই জায়গা পিলার দিয়ে সীমানা করা আছে। এটা হজের ফরজ কাজ। মসজিদে নামিরা : আরাফাতের ময়দানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুবৃহৎ হলো ‘মসজিদে নামিরা’। এখানে ফেরেশতা জিব্রাইল عليه السلام হজরত ইব্রাহীম عليه السلام-কে হজের নিয়মকানুন শিক্ষা দিয়েছিলেন। এখানেই হজরত আদম عليه السلام ও বিবি হাওয়া عليه السلام পরস্পরকে চিনতে পেরেছিলেন। মুজদালিফা : মিনা ও আরাফার মাঝখানের একটি জায়গার নাম মুজদালিফা। আরাফা থেকে ফিরে এখানে রাত যাপন করতে হয়। হজরত আদম عليه السلام ও বিবি হাওয়া আরাফাত থেকে ফিরে এখানে রাতবাস করেছিলেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। জামরাত : মিনায় শয়তানকে পাথর মারার জন্য নির্ধারিত স্থান। এখানে হাজিদের নিয়মমতো শয়তানকে পাথর মারতে হয়। যখন হজরত ইব্রাহীম عليه السلام হজরত ইসমাইল عليه السلام-কে কোরবানির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান এ জায়গায় তাঁকে বিরত রাখার জন্য তাঁর মধ্যে দুর্বলতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাধা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। সেই ঘটনা স্মরণ করে এখানে শয়তানকে পাথর মারা হয়। রমি : রমি শব্দের অর্থ ছোড়া বা নিক্ষেপ করা। মিনায় শয়তানকে পাথর মারাকে রমি বলে। জাবালে নুর : এটি সেই পাহাড়, যার চূড়ায় অবস্থিত বিখ্যাত গারে হেরা বা হেরা গুহা। এখানেই হজরত মুহাম্মদ ﷺ নবুয়তের আগে ছয় মাস নির্জনে ধ্যান করেছিলেন এবং পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াত এখানেই অবতীর্ণ হয়। জাবালে আবু কোবায়েস : এটি সাফা পাহাড়সংলগ্ন একটি সুউচ্চ পাহাড়। এটি মসজিদুল হারাম থেকে দেখা যায়। এই পাহাড়ের নাম আবু কোবায়েস। কাবা গৃহের নির্মাণকাজ শেষ করে হজরত ইব্রাহীম عليه السلام আল্লাহর নির্দেশে এই পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করে লোকদের হজের জন্য আহ্বান করেছিলেন। হাজরে আসওয়াদকে বেহেশত থেকে এনে প্রথম এই পাহাড়ে রাখা হয়েছিল। এই পাহাড়ে দাঁড়িয়ে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (ﷺ) অবিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জের উত্তরস্বরূপ অঙ্গুলির নির্দেশে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করেছিলেন। হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর এই চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করাকে শাক্কাল কামার বলে। মাউলুদুন নাবী (ﷺ) : সাফা বাজারের সনি্নকটে আবদুল মোত্তালিবের বাড়ি। এখানেই হজরত মুহাম্মদ (ﷺ) জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে এ বাড়িটিকে একটি সাধারণ গ্রন্থাগার করা হয়েছে। দারে আরকাম : সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী জায়গা। এখানে প্রিয়নবী (ﷺ) ও তাঁর আসহাবসহ কিছুদিন অন্তরালে বাস করেছিলেন। এখানেই হজরত ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। মসজিদে আকাবা : মক্কার অদূরে আকাবা নামক একটি জায়গায় হিজরতের আগে মদিনার ৬০ জন তীর্থযাত্রী এখানে হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মদিনায় গিয়ে তাঁরা ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। এখানে তাঁরা হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)-কে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেন। এই স্থানে নির্মিত মসজিদের নাম হলো মসজিদে আকাবা। আইয়ামে তাশরিক : ৯ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত দিনগুলোকে একত্রে আইয়ামে তাশরিক বা তাশরিকের দিন বলে। দম : এহরাম অবস্থায় কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি বা নিষিদ্ধ কোনো কাজ করে ফেললে তার ক্ষতিপূরণস্বরূপ যে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যায় তাকে ‘দম’ বলে। দম হেরেমের সীমানার মধ্যে দিতে হয়। মিকাত : পবিত্র ভূমি মক্কা শরিফে প্রবেশের জন্য চতুর্দিকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বিশেষ জায়গাকে সীমারেখা করে পোস্ট বা খুঁটি পুঁতে রাখা আছে। এদের মিকাত বলা হয়। হজ ও ওমরাকারীদের এই স্থান অতিক্রম করার আগেই এহরাম বাঁধতে হবে এই উদ্দেশ্যে যে তাঁরা হজ ও ওমরা করার জন্য প্রস্তুত আছেন ও সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন।
  • edited August 2017
    হজ মহান আল্লাহর এক বড় হুকুম পবিত্র হজ মহান আল্লাহর এক বড় হুকুম। এটি ইসলামের পঁাঁচটি স্তম্ভের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। মুসলমানদের মধ্যে যারা হজে যাওয়ার মতো আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান, তাদের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। কোরআন ও হাদিসে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে। কাদের ওপর হজ ফরজ_এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের পক্ষে আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করা ফরজ, যার পথের সামর্থ্য রয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি হজে যাওয়া-আসার খরচ বহনের সামর্থ্য রাখে এবং হজ চলাকালীন তার পরিবার-পরিজনের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করার মতো সামর্থ্য রাখে, তার ওপর হজ পালন করা ফরজ। আল্লাহ আরো বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরা পূর্ণ করো।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৯৬)। হাদিসের গ্রন্থগুলোতে হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিশদভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। যার ওপর হজ ফরজ তার উচিত তাড়াতাড়ি ফরজ দায়িত্ব পালন করা। তাই রাসুল ﷺ বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজের নিয়ত করল, সে যেন (তা পালনে) তাড়াতাড়ি করে।’ আবু দাউদ, দারেমি। অর্থাৎ হজ ফরজ হওয়ার পর সে যেন দেরি না করে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি সে হজ পালনে গড়িমসি করে এবং হজ না করে তাহলে এর জন্য সে দায়ী হবে। যদি এ অবস্থায় সে মারা যায়, তাহলে আল্লাহর দরবারে সে ফরজ হুকুম লঙ্ঘনকারী হিসেবে উঠবে। ইসলামী শরিয়ত মতে, প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি হজ করবে। চাই সে নারী হোক বা পুুরুষ। তাই প্রিয় নবীজির কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে, ‘হজ না করে থাকা ইসলামে নেই।’ (আবু দাউদ)। হজের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে প্রিয় নবী ﷺ আরো বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের প্রতি হজ ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা হজ করবে।’ (মুসলিম)। হজের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দার গুনাহগুলো মাফ করে দেন। রাসুল ﷺ পবিত্র হজকারীর ফজিলত এভাবেই বর্ণনা করছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করেছে এবং তাতে কোনো অশ্লীল কথা বলেনি বা কোনো অশ্লীল কাজ করেনি, সে হজ থেকে ফেরে সেদিনের মতো, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।’ [(অর্থাৎ তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়) বুখারি, মুসলিম]। হজ করতে গিয়ে যদি কেউ মারা যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আল্লাহ তার হজ কবুল করে নেন। তাকে উত্তম বিনিময় দান করেন। পুরস্কৃৃত করেন। প্রিয় রাসুল ﷺ এ বিষয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ, ওমরা অথবা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের নিয়তে বের হলো, অতঃপর সে ওই পথে মারা গেল, তার জন্য গাজী, হাজি বা ওমরাকারীর সওয়াব লেখা হবে।’ (বায়হাকি)। এই ব্যক্তি হজ না করেও হজের সওয়াব লাভ করবে। কারণ সে যখন ঘর থেকে বেরিয়েছিল তখন হজ করার নিয়তে বের হয়েছিল। কিন্তু হায়াত না থাকায় তার সে সৌভাগ্য হয়নি। তাই হজ না করলেও আল্লাহ তাকে তার নিয়তের কারণে এই সওয়াব দান করবেন। অনুরূপভাবে ওমরাকারী ও ইসলামের জন্য জিহাদকারী ব্যক্তি যদি পথিমধ্যে মারা যায়, তারাও এই মর্যাদা পাবে। অন্য হাদিসে হজকারীকে আল্লাহর যাত্রীদল বলা হয়েছে। প্রিয় রাসুল ﷺ বলেন, ‘আল্লাহর যাত্রী হলো তিন ব্যক্তি। গাজী, হাজি ও ওমরাকারী।’ নাসায়ি, বায়হাকি। হজকারীর ফজিলত ও তাৎপর্য বোঝাতে গিয়ে রাসুল ﷺ একবার সাহাবাদের বললেন, ‘যখন তুমি কোনো হাজির সাক্ষাৎ পাবে তাকে সালাম করবে, মুসাফাহা করবে এবং তাকে অনুুুুরোধ করবে তিনি যেন তোমার জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চান_তার ঘরে প্রবেশের আগে। কারণ হাজি হলো গুনাহ থেকে পবিত্র ব্যক্তি।’ মুসনাদে আহমাদ। এই হাদিস দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম, হজ সম্পন্নকারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে সে যার জন্য সুপারিশ করবে তা-ও কবুল করে নেওয়া হয়। ইসলামের এই মহান হুকুম যেরূপভাবে সামর্থ্যবান পুরুষের ওপর ফরজ, তেমনি সামর্থ্যবান মহিলাদের ওপরও ফরজ। আমাদের সমাজে অনেক মহিলা এমন রয়েছে, যারা হজে যাওয়ার মতো সামর্থ্য রাখে। অথচ তারা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না। যা নিতান্তই দুঃখজনক। মুসলমান হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হবে_নামাজ, রোজা যেমন সবার ওপর ফরজ, হজও সামর্থ্যবান লোকদের ওপর ফরজ। চাই সে নারী হোক বা পুরুষ। তবে হজ করার জন্য মহিলাদের ওপর শর্ত হচ্ছে, তারা মোহরেম পুরুষের সঙ্গে যাবে। একা একা বা অন্য পুরুষের সঙ্গে যাবে না। মোহরেম পুরুষ বলা হয় সেসব পুুরুষকে, যাদের সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েজ। যেমন_স্বামী, বাবা, আপন ভাই, ছেলে ইত্যাদি। মহিলাদের সফরে মোহরেম পুরুষের আবশ্যকতা ঘোষণা করে রাসুল ﷺ বলেন, ‘কোনো মহিলা যেন এক দিন এক রাত্রির পথ ভ্রমণ না করে কোনো মোহরেমের সঙ্গে ব্যতীত।’ বুখারি ও মুসলিম। দূরে কোথাও মহিলারা সফরে গেলে নিরাপত্তার বিষয়টি যেহেতু সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হয়, তাই তাদের সঙ্গে অভিভাবক হিসেবে মোহরেম পুরুষের উপস্থিতি জরুরি বলে ঘোষিত হয়েছে। তুলনামূলকভাবে নারীরা তাদের মোহরেম পুরুষের সঙ্গে নিরাপত্তা লাভ করে। তাই হজের সফরেও মোহরেম পুরুষের সঙ্গে যেতে হবে। বর্তমানে যেসব মহিলা হজ করতে যায়, তারা মোহরেমের বিষয়টির প্রতি সতর্ক থাকে না। অনেকে মোহরেম ছাড়াই হজে যায়। যা মোটেও শরিয়তসম্মত নয়। মেয়েদের হজ করা জেহাদ করার মর্যাদা রাখে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা رضي الله عنه বলেন, ‘আমি রাসুল ﷺ-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! নারীদের ওপর কি জেহাদ ফরজ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাদের ওপর জেহাদ ফরজ। তবে তাতে মারামারি নেই। তা হলো হজ ও ওমরা।’ (ইবনে মাজাহ)। অর্থাৎ তারা যদি হজ ও ওমরা করে, তাহলে জেহাদের সওয়াব পাবে। আরেকটি হাদিস দ্বারা এ বিষয়টির প্রতি সমর্থন পাওয়া যায়। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা رضي الله عنه বলেন, ‘আমি রাসুল ﷺ-এর কাছে জেহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলাম।’ তিনি বললেন, ‘তোমাদের জন্য জেহাদ হলো হজ।’ (বুখারি ও মুসলিম)। কোনো সামর্থ্যবান মুসলমান যেন হজ না করে মৃত্যুবরণ না করে। কারণ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ হজ না করে মৃত্যুর দুয়ারে পেঁৗছে যায়, তাহলে তার জন্য রয়েছে কঠিন পরিণতি। নবী করিম ﷺ এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘যাকে পথের সামর্থ্য অথবা অত্যাচারী শাসক অথবা গুরুতর রোগ বাধা দেয়নি; তবু সে হজ না করে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে_সে ইহুদি হয়ে মরুক বা নাসারা হয়ে মরুক (তাতে ইসলামের কিছু যায় আসে না)।’ (দারেমি)। প্রিয় নবীর মুখে এ ধরনের ধমকি ও শক্ত কথাই বলে দেয়, হজ না করলে কী পরিমাণ গুনাহ হয়। মহান আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে হজ করার তৌফিক দান করেন।
  • edited August 2017
    লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক প্রতিবছর জিলহজ মাসের ৯ তারিখে বিশ্ব মুসলিমদের আরাফাতের ময়দানে অভূতপূর্ব বিশাল জমায়েত হয় এবং লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বায়েক…’। পবিত্র হজ পালন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশিত শ্রেষ্ঠতম ইবাদত। এই পবিত্র ইবাদত অনুষ্ঠানে সারা বিশ্বের মানুষের সৌভ্রাত্র, প্রেম-প্রীতি এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির চরমতম নিদর্শন স্থাপিত হয়। হজ মানুষের ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শ সমুন্নত করে এবং নবতর চিন্তাচেতনা, শিক্ষা ও প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে বিশ্বজগৎকে আলোকিত করে তোলে। মদিনা মুনাওয়ারায় গমন, আল্লাহর পিয়ারা হাবিব হজরত রাসুলে মকবুল ﷺ -এর রওজা মুবারক জিয়ারত, মসজিদে নববীতে সালাত আদায়, বিশেষ করে দোয়া, ইস্তেগফার, দরুদ ও সালাম পেশের সুযোগ পাওয়া যায়। এতেও আল্লাহ পাকের নৈকট্য এবং হজরত রাসুলে পাক ﷺ -এর খাঁটি উম্মতে পরিণত করে। পবিত্র হজ পালন এমন এক ইবাদত, যাতে শক্তি ও সামর্থ্য থাকতে হবে। জানমালের ত্যাগ স্বীকার করে আল্লাহ পাকের ‘মেহমান’ হওয়া কত বড় ফজিলত ও মরতবার, তা বলে শেষ করা যায় না। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, মানুষের ওপর আল্লাহ পাকের হক আদায় করা (বায়তুল্লাহ শরিফের হজ করা ফরজ, যার হজে যাওয়ার মতো শক্তি-সামর্থ্য আছে। আর যে ব্যক্তি গড়িমসি করে (শারীরিক শক্তি ও হজে যাওয়ার মতো অর্থ থাকা সত্ত্বেও) হজ পালন থেকে বিরত থাকে, সে আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম ইবাদত থেকে বঞ্চিত হলো। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক হজরত ইব্রাহিম عليه السلام-কে নির্দেশ দেন, ‘হে ইব্রাহিম, লোকসমাজে হজের কথা জানিয়ে দাও। তারা যেন পদব্রজে এবং দুর্বল কৃশ উটে চড়ে দূর-দূরান্ত থেকে হাজির হয়, যাতে তাদের নানা কল্যাণ প্রত্যক্ষ করতে পারে।’ তাফসিরে ইবনে কাসিরে উল্লেখ আছে, হজরত ইব্রাহিম عليه السلام বললেন, ‘হে আল্লাহ, আমার এ আহ্বান কে শুনবে?’ তখন আল্লাহ পাক জানিয়ে দিলেন, ‘পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার।’ হজরত ইব্রাহিম عليه السلام কর্তৃক আল্লাহ প্রদত্ত এই দাওয়াত সর্বত্র ধ্বনিত হয়। হজ ও ওমরাহ্ পালনের মাহাত্ম্য ও মহা সওয়াবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে হজরত রাসুলে মকবুল ﷺ  বলেছেন, ‘পবিত্র হজ ও ওমরাহ্ পালন মানুষকে নিষ্পাপে পরিণত করে, যেমন লোহার মরীচিকা দূরীভূত হয়ে থাকে। যে ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ হয়েছে অথচ হজ পালন করে না, সে ইসলামী আমল-আকিদার অন্তর্ভুক্ত নয়। এ ছাড়া হজরত আলী رضي الله عنه বলেছেন, ‘সামর্থ্য-শক্তি থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি হজ পালন করে না, তার মৃত্যু ইহুদি বা নাসারার মতো হবে।’ নবম হিজরিতে পবিত্র হজের বিধান নাজিল হয়। ওই বছর ধর্মীয় কাজের ব্যস্ততার জন্য মহানবী হজরত রাসুলে পাক ﷺ  হজ পালন করতে পারেননি। তিনি হজরত আবু বকর رضي الله عنه-কে আমিরুল হজ মনোনীত করে পবিত্র হজ পালন করতে পাঠান। অতঃপর পরের বছর অর্থাৎ দশম হিজরিতে আল্লাহর পিয়ারা হাবিব ﷺ  তাঁর সব সঙ্গী-সাথি নিয়ে হজ সমাপন করে আরাফাতের বিশাল ময়দানের জনসমুদ্রে বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। জীবনে তিনি একবারই হজ পালন করেছিলেন। আমাদের দেশে একটি প্রথা চালু আছে, সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও এবং মা-বাবা হজ করেননি, পীর সাহেব অনুমতি দেননি, ছেলেমেয়ের বিয়েশাদি হয়নি- এ ধরনের অজুহাতে অনেকে হজ পালন করতে যেতে বিলম্ব করেন। আবার দেখা যায়, যাঁরা পবিত্র হজ পালনে যাচ্ছেন, তাঁরা বেশির ভাগই বয়স্ক মানুষ। স্মরণ রাখতে হবে, সফর ও হজ সহিহ্-শুদ্ধভাবে পালনে আহ্কাম, আরকান, সায়ি, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন, শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে শারীরিক শক্তি থাকা দরকার। এসব কিছু বিবেচনা করে শক্তি-সামর্থ্য ও শারীরিক অবস্থা ভালো থাকতে হজ পালনে যাওয়া উচিত বলে মনে করি। মনে রাখবেন, হজ দুই প্রকার- মানত হজ, যা ওয়াজিব আর নেকি লাভের উদ্দেশ্যে একাধিকবার হজ আদায় করা নফল। উপসংহারে বলতে হয়, হজ পালন একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার উদ্দেশেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। হাজি হব, রকমারি মালামাল খরিদ করব বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দেব- এজাতীয় সামান্যতম চিন্তাচেতনা হজ পালনের মূল চেতনার পরিপন্থী। অতএব, হালাল অর্থ দ্বারা খাঁটি অন্তর নিয়ে যাঁরা সহিহ্-শুদ্ধভাবে হজ পালন করবেন, আল্লাহ রাহমানুর রাহিম কেবল তাঁদের হজই কবুল করবেন।
  • সুবহানআল্লাহ
  • সুবহানআল্লাহ 
Sign In or Register to comment.
|Donate|Shifakhana|Urdu/Hindi|All Sunni Site|Technology|